September 22, 2024, 5:32 pm
নিজস্ব প্রতিবেদক:
ধর্ম পরিচয় গোপন করে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তুলে প্রতারণার মাধ্যমে একটি বাসায় নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে বগুড়ার শেরপুর থানার সাবেক উপ-পরিদর্শক (এসআই) মিথুন সরকারের(২৮) বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।
বৃহষ্পতিবার(১৭আগস্ট) বগুড়ার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল নং-২ এর আদালতে নির্যাতিত ওই ছাত্রী বাদি হয়ে এই মামলা দায়ের করেন। আদালতের বিচারক নূর মোহাম্মদ শাহরিয়ার কবির অভিযোগ তদন্ত করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) কে ১৬ অক্টোবরের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করার নির্দেশ দিয়েছেন।
বগুড়া জেলা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুন্যাল (২) এর পিপি) আশেকুর রহমান সুজন মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রী বাদি হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন (সংশোধনী/০৩) ৯(১) ধারায় এসআই মিথুন সরকারের বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা দায়ের করেছেন। আদালত তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করার জন্য পিবিআইকে নির্দেশ দিয়েছেন।
অভিযুক্ত পুলিশের উপ-পরিদর্শকের মিথুন সরকার ময়মনসিংহ বিভাগের শেরপুর সদর উপজেলার বয়ড়া পালপাড়া গ্রামের সুনীল সরকারের ছেলে। তিনি বাংলাদেশ পুলিশের ৩৮তম ব্যাচের এসআই হিসেবে বগুড়ার শেরপুর থানায় কর্মরত ছিলেন। পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় ইতিমধ্যেই তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে বগুড়ার পুলিশ লাইন্সে সংযুক্ত করা হয়েছে।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, বগুড়ার ওই ছাত্রী রাজধানীর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। বগুড়ার পুলিশ সুপারের মাধ্যমে বিচ্ছেদ পরবর্তী একটি পারিবারিক সমস্যা সমাধানের সময় গত মে মাসে পুলিশের উপপরিদর্শক মিথুন সরকারের সঙ্গে পরিচয় হয়। ওই ছাত্রীর মুঠোফোন নম্বর সংগ্রহ করে ইমু এবং টেলিগ্রামে যোগাযোগ করেন। এ সময় ওই ছাত্রী পুর্ণাঙ্গ পরিচয় জানতে চাইলে অভিযুক্ত এসআই মিথুন পারিবারিক তথ্য, ধর্ম ও স্থায়ী ঠিকানা গোপন করে তার বাড়ী ময়মনসিংহ শহরে এবং পুলিশের ৩৮তম ব্যাচের সাব-ইন্সপেক্টর হিসেবে শেরপুর থানায় কর্মরত বলে জানান। নিজেকে অবিবাহিত এবং কৌশলে ধর্মীয় পরিচয় গোপন করে এসআই মিথুন ওই তরুণীকে প্রেমের প্রস্তাব দেন। ঘুরে ফিরে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে একপর্যায়ে তরুণীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলেন।
এজাহারে আরও উল্লেখ করা হয়, গত ৩ জুন দুপুরের দিকে বগুড়ার শেরপুর শহরের ধুনট মোড় থেকে তরুণীকে মোটরসাইকেলে তুলে নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় ঘোরাঘুরির পর শৈলী রেস্টুরেন্টে বসে বসে দীর্ঘক্ষণ গল্পগুজব করেন। বিকেলের দিকে পূর্ব পরিচিত একজনের বাসায় দাওয়াত খাওয়ার কথা বলে রেস্টুরেন্ট থেকে মোটরসাইকেলে তুলে নিয়ে যান। পরে বিকেল পাঁচটার দিকে শেরপুর উপজেলার শাহ্ বন্দেগী ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের গ্রীনটাউন, টোলার গেট (খন্দকার টোলা) এলাকার আবু সাঈদ মাষ্টারের চারতলা ফ্ল্যাট বাসার নিচতলায় একটি ইউনিটে ভাড়াটিয়া একজনের বাসায় কৌশলে নিয়ে গিয়ে ইচ্ছের বিরুদ্ধে ধর্ষণ করেন।
সম্ভ্রম হারানোর পর ওই তরুণী মানসিকভাবে ভেঙে পড়লে পুলিশ উপপরিদর্শক মিথুন ঈদুল আজহার পর বিয়ের প্রতিশ্রুতি দেন। তরুণী বাড়িতে ফিরে পরিবারের লোকজনের কাছে ঘটনা খুললেও সামাজিক মান মর্যাদা ও লোক লজ্জার ভয়ে বিষয়টি চেপে যাওয়ার পরামর্শ দেন।
মামলার এজাহারে আরও উল্লেখ করা হয়েছে,ঈদের পর বিয়ের প্রতিশ্রুতি দেওয়ায় ২৭ জুন এসআই মিথুনের সঙ্গে দেখা করতে শেরপুর থানায় যান। এ সময় থানার ডিউটি অফিসারের মাধ্যমে জানতে পারেন এসআই মিথুন সরকার হিন্দু ধর্মের অনুসারী।
বিষয়টি জানার পর ওই তরুণী এসআই মিথুনের কাছে ধর্মীয় পরিচয় গোপন করার কারণ জানতে চান। এ সময় পুলিশের এসআই মিথুন মেয়েটিকে জানান, ধর্মীয় পরিচয় দিলে তো প্রেম হতো না। ধর্মীয় পরিচয় ফাঁস হওয়ার পর ওই তরুণী মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েন এবং এক পর্যায়ে ওই এসআইকে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্ত অভিযুক্ত এসআই মিথুন বিয়ে করতে তালবাহানা শুরু করেন । এ সময় ওই তরুণী পুলেশের উপপরিদর্শক মিথুনের বিরুদ্ধে শেরপুর থানায় অভিযোগ করতে গেলে মামলা গ্রহণ না করে শেরপুর থানার ওসি বাবু কুমার সাহা আপষ মিংমাংসার মাধ্যমে বিষয়টি নিস্পত্তির প্রস্তাব দেন। প্রস্তাব প্রত্যাখান করে ওই তরুণী বৃহষ্পতিবার আদালতে মামলা দায়ের করেন।
জানতে চাইলে অভিযুক্ত পুলিশের উপপরিদর্শক মিথুন সরকার বলেন,’ ওই ছাত্রীর সঙ্গে প্রেমের সর্ম্পক ছিল। তাকে ভালোবাসি তবে ধর্ম আলাদা হওয়ায় এবং পরিবার রাজি না থাকায় বিয়ে করা সম্ভব নয়। তার সঙ্গে যা কিছু করেছি, ভুল করেছি।’
বগুড়ার জেলা পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্ত্তী বলেন, তদন্ত কমিটির দেওয়া প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ইতিমধ্যেই অভিযুক্ত ওই এসআইকে সাময়িক বরখাস্ত এবং পুলিশ লাইন্সে সংযুক্ত করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলছে।